আমার প্রায়ই সেই রাতটার কথা মনে পড়ে, সেই দীর্ঘ রাতটার কথা, প্রতিটি শীতের রাতের
যোগফলের থেকেও দীর্ঘ সেই শীতের রাতটার কথা... আমার মনে পড়ে সেই রাতটা যে রাতে মায়ামির একটা বাচ্চা হল। কত গুলো আগের দীর্ঘ শীতের রাত আমি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি কেউই জানে না.. আমার বরাবরই মনে হত মায়ামির বাচ্চা হবে একটা শীতের রাতে, চারিদিকে বরফ পড়ে থাকবে.. যে শেষ রাতে প্রচন্ড শীতে গোটা শহর বাতিল করে দিবে তার যানগুলোকে। কেউ থাকবে না দূরে, কেউ থাকবে না কাছে, আমি মায়ামিকে নিয়ে হাটতে থাকবো, হেটে হেটে খুজে দেখবো হসপিটাল.. প্রচন্ড পেইনে বসে পড়বে মায়ামি মধ্যপথে, আমি দিশেহারা হয়ে অন্ধের মত খুজতে থাকবো একজন ডক্টর.. তারপর আমি আর ভাবতে পারতাম না.. ব্যালকনির ছোট্ট ফাকা গ্রীল দিয়ে বহুদূরের আকাশে তাকিয়ে থাকতাম.. প্রায়ই সেখানে নীল আলোর ঝলকানি দেখা যেত.. ভেতর থেকে মায়ামির ডাকটা মনে হত বহুদূর থেকে বাতাসে ভেসে আসছে.. কাছেই, প্রায়ই কেউ শীতের মধ্য দীর্ঘ রাত গুলাতে নুপুর পায়ে নেচে যেত...আমার মাথা ধরে আসতো...অবাক হয়ে ভাবতাম এত রাতে মানুষ কিভাবে পারে নুপুর পায়ে নেচে উঠতে...এমনি এক শীতের দীর্ঘ রাতে মায়ামির বাচ্চা হয়..যদিও আমার শংকা পুরোটা হয়নি সত্য..তবুও সে রাতে ছিল প্রচন্ড ঠান্ডা। প্রচন্ড ঠান্ডা রাতে পাশেই সেই নুপুর পেয়ে নেচে যাওয়া মানুষটার মাতাল করা সেই শব্দে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ব্যালকনির একটা চেয়ারে সামান্য মাথা দিয়ে তখন মায়ামির প্রচন্ড ডেলিভারি পেইন ওঠে...আমাকে ডাকে নি ও... কিভাবে এত পেইন নিয়ে ও একা একা সব কিছু ঠিকঠাক করে, এ্যাম্বুলেন্স ডেকে ব্যাগ লাগেজ গুছিয়ে ডক্টর কে ফোন দিয়ে আমাকে আস্তে আস্তে ডেকেছিল ভাবলেই আমার কোথায় যেন অনেকটা কষ্ট ধরে যায়... আমি অবাক হয়ে হয়ে ওর দিকে তাকালাম.. ও কিছু বললো না.. চেয়ে থাকলো আমার চোখের দিকে...আমি তাকিয়ে থাকলাম অন্যদিকে.. ওর চোখে তখন সরাসরি তাকানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না.. প্রচন্ড ব্যাথায় চোখ দুটো যেন ভেঙ্গে যাচ্ছিল... আমি ওর হাত দুটো ধরলাম.. হাত গুলো প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল। মনে হচ্ছিল আমি দুটো বরফ ধরে আছি.. সেই বরফ শীতল হাত দুটো ধরে ওকে ব্যালকনি থেকে রুমে নিয়ে গেলাম...দেখি ব্যাগ গোছানো.. ও যে এতটা করতে পারে সেটা আমার আগেই ধারনা ছিল..ওর মত এত শক্ত আর আত্মনির্ভরশীল মেয়ে আমি দেখি নি... আমরা সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছিলাম.. আমার এক হাতে একটা ব্যাগ আর অন্য হাতে ওর বরফ শীতল একটা হাত... দুই তলা থেকে নীচ তলাটা আমার তখন কয়েক আলোকবর্ষ হিসাবে ঠেকছিল... মনে হচ্ছিল এই পথ কোনদিনই শেষ হবে না...তবুও পথটা শেষ হয়ে গিয়েছিল.. ড্রাইভার এসে আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিল, দরজা খুলে দিয়েছিল, আমরা উঠে বসেছিলাম, ও দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল আর ফাকা সেই শহরের দীর্ঘ রাস্তা গুলো দিয়ে ঝড়ের বেগে নিয়ে যাচ্ছিল হসপিটালে... গাড়ির ভেতর যেন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম গোটা তিনজনই.. কেউই কথা বলছিল না.. একটা বরফ শীতল হাতের ভারে আমি যেন ডুবে যাচ্ছিলাম এক আঁখি সমুদ্রে...বরফ শীতল হাতের সেই মানুষটার আঁখি যুগলে.. যেখানে একবার তাকালে আমি ডুবে যায় সহস্র বারেরও অধিক... ড্রাইভার চালিয়ে যাচ্ছে, ঘুমন্ত বাড়ি আর মানুষ গুলার মাঝখান দিয়ে শহরটা জেগে আছে, ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে জনপদ... আমার হঠাৎ খুব চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল মায়ামি, তোমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার...আমার প্রচন্ড কান্না আসছে তোমার চোখে তোমার প্রচন্ড ব্যাথা দেখে... কিন্তু বলা হয়নি, বলতে পারি নি... এই শীতেও প্রচন্ড গলাটা ধরে শুকিয়ে যাচ্ছিল আমার মনে হচ্ছিল এক সমুদ্র জ্বলেও মিটবে না সেই তৃষ্ণা.. একবারও বলে নি মায়ামি, কষ্ট হচ্ছে, একবারও বলে নি, আর কত দূর..! চুপ করে বসে ছিল জানালায় রেখে চোখ... আমরা পৌছে গেলাম একটা বিশাল হসপিটালের গেটে.. কয়েকজন সিস্টার এসে ধরে নিয়ে গেল স্ট্রেচারে করে.. ডক্টর এক ঝলক দেখে আমার কাছে জানতে চাইলো আমি কি হই পেশেন্টের! আমি উত্তর দিলাম না... বললো আপনার পেশেন্ট এর অবস্থা মনে হচ্ছে বেশ ক্রিটিকাল.. আরো আগেই আসা উচিত ছিল!আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, স্ট্রেচারে করে মায়ামি চলে যাচ্ছিল একটু একটু করে দূরে, তখনো ঠান্ডা চোখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে দেখছিল ও... ডক্টর চলে গেল.. সিস্টার রা চলে গেল.. আমাদের নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার ও চলে গেল, শুধু আমিই রয়ে গেলাম এই শুন্য আধো আলো আধো ছায়ার ব্যালকনির শেষ প্রান্তে... অনেক পরিষ্কার আর গোছানো হসপিটালের ও কিছু কড়া একটা গন্ধ থেকেই যায়.. আমার নাকে তাই আসছিল... আমি অস্থিরতা নিয়ে হেটে বেড়াচ্ছি ব্যালকনির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে... কয়টা বাজে.. কতক্ষণ আগে মায়ামি ভেতরে গেছে কিছুই মনে করতে পারছি না আমি, হেটে হেটে একবার সামনের দিকটাতে চলে গেলাম... অনেকটা চার্চের শেপের মত একটা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছিল.. হালকা সুরে হিমের আওয়াজ আসছিল.. এটা কি কোন মিশনারী হসপিটাল! তাও জানি না... আস্তে আস্তে হেটে হেটে দরজায় গিয়ে দাড়ালাম.. অনেক গুলা মানুষ একসাথে বসে আছে মৃদু আওয়াজে তাদের কন্ঠ থেকে ভেসে আসছে হিম ... আমার দিকে একবার তাকালো ওরা, কিন্তু কেউই থেমে গেল না.. আমি পিছনে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে রইলাম.. চার্চের সামনের দেওয়ালে একটা বিশাল দেওয়াল ঘড়ি ছিল... সময়টা দেখা হয় নি.. ঘড়িটাই দেখা হয়েছে খালি.. কতক্ষণ বসে আছি জানি না, কি ভাবছি জানি না, সামনে কি দেখছি আর কি দেখছি না তাও জানি না, কি শুনছি জানি না... একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের দিকে.. অদ্ভুত করুন সুরের হিমে মেয়েটা মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে ক্রমেই... কখন যেন হিম থেমে গেছে, ঘন্টায় চারবার বাজনা বেজে উঠলো.. কেউ একজন পাশ দিয়ে হেটে গেল... পায়ের শব্দে তাকিয়ে দেখলাম একটা আবছায়া... আমি উঠে দাড়ালাম.. হেটে দরজায় গেলাম... এত মানুষ ছিল এতক্ষণ এখন কেউ নেই, সেই একা আমি আর একা একা অপেক্ষা... কেউই নেই ব্যালকনিতে.. আমি খোজার চেষ্টা করলাম না... বসে রইলাম সেই তীব্র কড়া ঔষুধি গন্ধের মধ্যে... অনেক দূরে কয়েজন সিস্টার মনে হচ্ছিল কাউকে খুজছে... আমি ভাবলাম আমাকে, ধীরে ধীরে হেটে গেলাম.. ওরা বললো আপনার একটা সিগ্নেচার লাগবে, পেশেন্টের হাসবেন্ড থাকলে বেটার হত..আমি কিছু না বলে কলম টা নিয়ে একটা সাইন করে দিলাম, রিলেশনশীপের যায়গা তে লিখলাম "ওয়াইফ"..তারা বোধকরি সামান্য অবাক হল...সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে কয়েক পলক চেয়ে রইলো...হয়তবা তারাও এতটা নির্লিপ্ত স্বামী বা স্ত্রী দেখে নি...কি যেন বলতে গিয়েও না বলে দ্রুত পায়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল...ওরা অন্ধকারে মিলিয়ে যাবার পরপরই আমার হঠাৎই মনে হল...সিগ্নেচার কেন নিল..বা মায়ামির কি অবস্তা..সেটা তো জিজ্ঞাসা করা হয় নি... কয়টা বাজে এখন? পৃথিবীর বুকে কি নেমে এসেছে আলো.. বহুক্ষণ আগে চারবার ঘন্টার আওয়াজে ফিরে এসেছিলাম..চুপচুপ অন্য কিছু ভাবতে চেষ্টা করছি.. মায়ামি প্রচন্ড ব্যাথায় জেগে গেল পাশে আমি থাকবো না সে জানতো তার প্রেগ্ন্যাসির শেষ দিনগুলাতে আমি তার খুব কাছেই থাকতাম কিন্তু একই বিছানাতে না... তারপর সে উঠে গেল, হেটে এল ব্যাকলনিতে আমাকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না.. একবার ডক্টর কে ফোন করলো.. কি সব গোছালো এ্যাম্বুলেন্স এর আপডেট নিলো তারপর ব্যালকনিতে আমাকে ডেকে নিল.. আমি দেখতে পাচ্ছিলাম গোটা দৃশ্যটাই.. তবুও মায়ামির কোন খবর তখনো পাচ্ছি না.. এরা এতটা নির্দয় কেন! আমাকে কোন খবর না দিয়ে মায়ামি আর তার বাচ্চার সাথে কি হচ্ছে আমি জানি না.. আমি উঠে দাঁড়ায়, হেটে হেটে সেই চার্চ টা পেরিয়ে অল্প একটু দূরে এগিয়ে গেলাম.. শেষ রাতের আলোয় দুজন মানুষ কে দেখলাম... একজন কাদছে অন্যজন সান্তনা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে... আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের কি হয়েছে জানতে.. আমার কেন জানি না, মনে হচ্ছিল সেই ক্রন্দনরত মানুষটা আমি পাশের জন অন্য কেউ... মায়ামি কিংবা তার বাচ্চা কিংবা আমাদের সন্তান যে কোন একজনকে বাচানো যায় নি... আমি আর ওদের দিকে তাকালাম না... লম্বা পায়ে হেটে গেলাম অন্য প্রান্তে.. একজন নান আলো হাতে হেটে আসছিল.. আলো হাতে কালো পোশাকে তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছিল.. আমার দিকে না তাকিয়ে চলে গেল... আমি হেটে যেতে লাগলাম... কাছেই বোধ হয় কোথাও পাব আছে... মৃদু সুরে গান নাচ আর গলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি.. একবার ভেতরে যেতে ইচ্ছে হল পাব জায়গাটা আমার পছন্দের কিন্তু কখনো যাই না... কয়েকটা সল্প বাসনার কন্যা হেটে চলে গেল... এখনো বাড়ি ফেরে নি ওরা.. কত রাত জাগে ওরা! আমি আর ভেতরে ঢুকলাম না.. একজন মাতাল এসে কি যেন অভিযোগ দিতে চাইছিল আমার কাছে.. আমি চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ওর কথা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে.. কিন্তু পারলাম না... আমার চোখে তখন মায়ামির চোখ ভেসে এল...ওর যন্ত্রণা তে ভেংগে যাওয়া চোখ... ওর বরফ শীতল হাত... মাতাল মানুষ টা বোধহয় বুঝে গেছে আমি তার দিকে নেই.. সে বললো ইউ ওকে ম্যান? ইউ আর ক্রায়িং... আমি জাস্ট বললাম নাথিং! বয়েস ডোন্ট ক্রাই... তারপর তাকে ফেলে হাটতে লাগলাম.... আমি ফিরে যেতে চাইছিলাম সেই ব্যালকনিতে কিন্তু আমি কিছুতেই কোন দিক দিয়ে কোন পথে এসেছিলাম.. মনে করতে পারলাম না.. কাউকে জিজ্ঞাসা করে যাব তাও জানিনা কি করে বোঝাবো! কোন নামই আমি জানি না.. আমি একবার শুধু শুনে নিলাম রিসিপশন টা কোন দিকে... আমি যে বুঝে গেছি তাও না... ধারনা করে হাটতে থাকলাম পাবটার একদমই সামনে চলে এলাম.. একটা মেয়ে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল.. আমি কিছুই বলার আগে সে দেখিয়ে দিল আর বলে দিল কিভাবে হসপিটালে যেতে হবে আর কিভাবে রিসিপশন পাব...আমি বলতে চাইলাম প্লিজ হেল্প মি..টেক মি দেয়ার...সে বুঝে নিল....জানি না সে এত কিছু কিভাবে বুঝে নিল... আমাকে নিয়ে গেল পথ ধরে.. যেতে যেতে বললো ইউ লাভ হার হা? আমি কিছু বললাম না.. সে বললো আই ওয়ার্ক দেয়ার..আই ওয়াজ অন অফ ইয়োর গার্লফ্রেন্ডস নার্স বাট মাই ওয়ার্কিং আওয়ার ইজ ওভার.. স্ট্রীপার ইজ মাই সেকেন্ড জব.. আমি বললাম ইউ আর আ সিস্টার এন্ড আ স্ট্রিপার... ইজেন্ট ইট আ কনফ্লিক্ট?? ও বললো ইয়োর গার্লফ্রেন্ড ইজ প্রিটি.. আমি শুধু বললাম থ্যাংকস... প্লিজ টেক মি দেয়ার.. দুই মিনিটে আমাকে পৌছে দিয়ে গেল... ধন্যবাদ দিতে পারলাম না চলে গেল..
আমি হেটে যেতে লাগলাম বিভ্রান্ত, ক্লান্ত পথ হারা জাহাজীর মত.. ব্যালকনিটাকে আমার সমুদ্র বলে ভ্রম হচ্ছিল.. আর দূরে দাঁড়ানো মানুষ গুলাকে আইল্যান্ড...বহু কষ্টে সাঁতরে ...সাঁতরে... আইল্যান্ডে পৌছে গেলাম...সেই ডক্টর, সেই সিস্টার গুলা... সেই আধো আলো ছায়া...ঢং ঢং করে ৫ বার গেল ঘন্টা বেজে... বুঝলাম ৫ টা বাজে...প্রচন্ড ঠান্ডায় মনে হচ্ছিল জমে যাচ্ছি...ডক্টর বললো...প্লিজ কাম উইথ মি...আমি গেলাম... ওনার মুখ দেখে সিচুয়েশন বোঝার চেষ্টা করলাম... বাট বুঝলাম না...সে বললো... কংগ্রেটস ম্যান ইউ আর নাউ আ প্রাউড ফাদার অফ আ বিউটিফুল বেবি গার্ল... বাট বিফোর ইউ গো দেয়ার ইউ হ্যাভ টু টেল মি সামথিং... আমি উত্তর দিলাম না... ইয়োর রিলেশনশিপ উইথ ইয়োর ওয়াইফ? আমি বললাম থ্যাংকস ডক.. ইউ আর ট্রু লাইফ সেভার.. আমি হেটে হেটে মায়ামির কেবিনে গেলাম...মায়ামির অল্প দূরে একটা বাচ্চা শুয়ে আছে কি চমৎকার নিশপাপ দেখাচ্ছে ওর মুখ গুলা.. মায়ামি আমাকে দেখলো, তাকালো হাসি দিতে চেষ্টা করলো.. আমি শুধু বললাম তোমার মেয়েটা অনেক সুন্দর হয়েছে.. ও কিছু বললো না.. তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে.. একবার শুধু বললো বাচ্চা তোমারও! আমি বললাম আমি জানি! মায়ামি... আলো নেমে আসতে এখানে অনেকটা বাকি এখনো.. কেবিনের জানালা দিয়ে কিসের যেন একটা সবুজ আলো ভেসে আসছিল.. সবুজ আলোটা এসে পড়ছিল মায়ামির ঠিক চোখের উপর.. ওর কালো চোখে, লম্বা চুলের, যন্ত্রনা থেকে ফিরে আসা মুখটাতে সবুজ আলোটা অদ্ভুৎ সুন্দর দেখাচ্ছিল.. মায়ামি বললো বাচ্চাটা কার মত হয়েছে? তোমার না আমার.. আমি হেসে ফেললাম! চেয়ারটা টেনে ওর পাশে বসতে বসতে বললাম মায়ামি আমার কাছে পৃথিবীর সব ছোট বাচ্চাদের একই লাগে.. কোনটা ছেলে বা মেয়ে সেটা অন্য কেউ এসে না বলে দিলে আমি বুঝি না.. মায়ামি হেসে দিল.. টেবিলের পাশে অনেক গুলা যন্ত্রে তখন আলো জ্বলছে আর নিভে যাচ্ছে.. মায়ামি বসে আছে..কয়েকজন সিস্টার এসে মায়ামির কিছু চেক আপ করে নিল.. আমাকে বললো.. মিস্টার ইয়োর টাইমস আপ.. ইউ মে লিভ দেম.. জাস্ট আ সেক সিস... মায়ামি বললো তুমি বাসায় যাও.. আমি বলতে চাইলাম মায়ামি আমি আরো দীর্ঘক্ষণ এখানে থাকতে চাই.. পারলাম না.. মায়ামির হাতটা ধরে বললাম.. থ্যাংকস! ফর গিভিং মি দ্যাট ফাদার'স ফিলিং... বাইরে এখনো সেরকম আধো আলো ছায়া...খুব কাছেই নেই কেউ।। অন্ধকার ভেদ করে এসে একজন সিস্টার জিজ্ঞাসা করলো আমি কোন নাম ঠিক করেছি কিনা? না করলে তার কাছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে ১০ ডলার দিলে সে একটা সুন্দর নাম আমাকে দিতে পারে..! আমি কিছু বললাম না... পকেট থেকে ১০০ ডলার তাকে দিয়ে বললাম...থ্যাংকস সিস্টার আই ডু হ্যাভ আ নেম ফর মাই বেবী গার্ল...তারপর হেটে যাচ্ছিলাম...আর আস্তে আস্তে বললাম ইটস হার্লিন কুইনজেল বেইলি ম্যারি ফ্রান্সিস লুইজিয়ানা বাই দ্যা ওয়ে...
যোগফলের থেকেও দীর্ঘ সেই শীতের রাতটার কথা... আমার মনে পড়ে সেই রাতটা যে রাতে মায়ামির একটা বাচ্চা হল। কত গুলো আগের দীর্ঘ শীতের রাত আমি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি কেউই জানে না.. আমার বরাবরই মনে হত মায়ামির বাচ্চা হবে একটা শীতের রাতে, চারিদিকে বরফ পড়ে থাকবে.. যে শেষ রাতে প্রচন্ড শীতে গোটা শহর বাতিল করে দিবে তার যানগুলোকে। কেউ থাকবে না দূরে, কেউ থাকবে না কাছে, আমি মায়ামিকে নিয়ে হাটতে থাকবো, হেটে হেটে খুজে দেখবো হসপিটাল.. প্রচন্ড পেইনে বসে পড়বে মায়ামি মধ্যপথে, আমি দিশেহারা হয়ে অন্ধের মত খুজতে থাকবো একজন ডক্টর.. তারপর আমি আর ভাবতে পারতাম না.. ব্যালকনির ছোট্ট ফাকা গ্রীল দিয়ে বহুদূরের আকাশে তাকিয়ে থাকতাম.. প্রায়ই সেখানে নীল আলোর ঝলকানি দেখা যেত.. ভেতর থেকে মায়ামির ডাকটা মনে হত বহুদূর থেকে বাতাসে ভেসে আসছে.. কাছেই, প্রায়ই কেউ শীতের মধ্য দীর্ঘ রাত গুলাতে নুপুর পায়ে নেচে যেত...আমার মাথা ধরে আসতো...অবাক হয়ে ভাবতাম এত রাতে মানুষ কিভাবে পারে নুপুর পায়ে নেচে উঠতে...এমনি এক শীতের দীর্ঘ রাতে মায়ামির বাচ্চা হয়..যদিও আমার শংকা পুরোটা হয়নি সত্য..তবুও সে রাতে ছিল প্রচন্ড ঠান্ডা। প্রচন্ড ঠান্ডা রাতে পাশেই সেই নুপুর পেয়ে নেচে যাওয়া মানুষটার মাতাল করা সেই শব্দে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ব্যালকনির একটা চেয়ারে সামান্য মাথা দিয়ে তখন মায়ামির প্রচন্ড ডেলিভারি পেইন ওঠে...আমাকে ডাকে নি ও... কিভাবে এত পেইন নিয়ে ও একা একা সব কিছু ঠিকঠাক করে, এ্যাম্বুলেন্স ডেকে ব্যাগ লাগেজ গুছিয়ে ডক্টর কে ফোন দিয়ে আমাকে আস্তে আস্তে ডেকেছিল ভাবলেই আমার কোথায় যেন অনেকটা কষ্ট ধরে যায়... আমি অবাক হয়ে হয়ে ওর দিকে তাকালাম.. ও কিছু বললো না.. চেয়ে থাকলো আমার চোখের দিকে...আমি তাকিয়ে থাকলাম অন্যদিকে.. ওর চোখে তখন সরাসরি তাকানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না.. প্রচন্ড ব্যাথায় চোখ দুটো যেন ভেঙ্গে যাচ্ছিল... আমি ওর হাত দুটো ধরলাম.. হাত গুলো প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল। মনে হচ্ছিল আমি দুটো বরফ ধরে আছি.. সেই বরফ শীতল হাত দুটো ধরে ওকে ব্যালকনি থেকে রুমে নিয়ে গেলাম...দেখি ব্যাগ গোছানো.. ও যে এতটা করতে পারে সেটা আমার আগেই ধারনা ছিল..ওর মত এত শক্ত আর আত্মনির্ভরশীল মেয়ে আমি দেখি নি... আমরা সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছিলাম.. আমার এক হাতে একটা ব্যাগ আর অন্য হাতে ওর বরফ শীতল একটা হাত... দুই তলা থেকে নীচ তলাটা আমার তখন কয়েক আলোকবর্ষ হিসাবে ঠেকছিল... মনে হচ্ছিল এই পথ কোনদিনই শেষ হবে না...তবুও পথটা শেষ হয়ে গিয়েছিল.. ড্রাইভার এসে আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিল, দরজা খুলে দিয়েছিল, আমরা উঠে বসেছিলাম, ও দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল আর ফাকা সেই শহরের দীর্ঘ রাস্তা গুলো দিয়ে ঝড়ের বেগে নিয়ে যাচ্ছিল হসপিটালে... গাড়ির ভেতর যেন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম গোটা তিনজনই.. কেউই কথা বলছিল না.. একটা বরফ শীতল হাতের ভারে আমি যেন ডুবে যাচ্ছিলাম এক আঁখি সমুদ্রে...বরফ শীতল হাতের সেই মানুষটার আঁখি যুগলে.. যেখানে একবার তাকালে আমি ডুবে যায় সহস্র বারেরও অধিক... ড্রাইভার চালিয়ে যাচ্ছে, ঘুমন্ত বাড়ি আর মানুষ গুলার মাঝখান দিয়ে শহরটা জেগে আছে, ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে জনপদ... আমার হঠাৎ খুব চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল মায়ামি, তোমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার...আমার প্রচন্ড কান্না আসছে তোমার চোখে তোমার প্রচন্ড ব্যাথা দেখে... কিন্তু বলা হয়নি, বলতে পারি নি... এই শীতেও প্রচন্ড গলাটা ধরে শুকিয়ে যাচ্ছিল আমার মনে হচ্ছিল এক সমুদ্র জ্বলেও মিটবে না সেই তৃষ্ণা.. একবারও বলে নি মায়ামি, কষ্ট হচ্ছে, একবারও বলে নি, আর কত দূর..! চুপ করে বসে ছিল জানালায় রেখে চোখ... আমরা পৌছে গেলাম একটা বিশাল হসপিটালের গেটে.. কয়েকজন সিস্টার এসে ধরে নিয়ে গেল স্ট্রেচারে করে.. ডক্টর এক ঝলক দেখে আমার কাছে জানতে চাইলো আমি কি হই পেশেন্টের! আমি উত্তর দিলাম না... বললো আপনার পেশেন্ট এর অবস্থা মনে হচ্ছে বেশ ক্রিটিকাল.. আরো আগেই আসা উচিত ছিল!আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, স্ট্রেচারে করে মায়ামি চলে যাচ্ছিল একটু একটু করে দূরে, তখনো ঠান্ডা চোখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে দেখছিল ও... ডক্টর চলে গেল.. সিস্টার রা চলে গেল.. আমাদের নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার ও চলে গেল, শুধু আমিই রয়ে গেলাম এই শুন্য আধো আলো আধো ছায়ার ব্যালকনির শেষ প্রান্তে... অনেক পরিষ্কার আর গোছানো হসপিটালের ও কিছু কড়া একটা গন্ধ থেকেই যায়.. আমার নাকে তাই আসছিল... আমি অস্থিরতা নিয়ে হেটে বেড়াচ্ছি ব্যালকনির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে... কয়টা বাজে.. কতক্ষণ আগে মায়ামি ভেতরে গেছে কিছুই মনে করতে পারছি না আমি, হেটে হেটে একবার সামনের দিকটাতে চলে গেলাম... অনেকটা চার্চের শেপের মত একটা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছিল.. হালকা সুরে হিমের আওয়াজ আসছিল.. এটা কি কোন মিশনারী হসপিটাল! তাও জানি না... আস্তে আস্তে হেটে হেটে দরজায় গিয়ে দাড়ালাম.. অনেক গুলা মানুষ একসাথে বসে আছে মৃদু আওয়াজে তাদের কন্ঠ থেকে ভেসে আসছে হিম ... আমার দিকে একবার তাকালো ওরা, কিন্তু কেউই থেমে গেল না.. আমি পিছনে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে রইলাম.. চার্চের সামনের দেওয়ালে একটা বিশাল দেওয়াল ঘড়ি ছিল... সময়টা দেখা হয় নি.. ঘড়িটাই দেখা হয়েছে খালি.. কতক্ষণ বসে আছি জানি না, কি ভাবছি জানি না, সামনে কি দেখছি আর কি দেখছি না তাও জানি না, কি শুনছি জানি না... একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের দিকে.. অদ্ভুত করুন সুরের হিমে মেয়েটা মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে ক্রমেই... কখন যেন হিম থেমে গেছে, ঘন্টায় চারবার বাজনা বেজে উঠলো.. কেউ একজন পাশ দিয়ে হেটে গেল... পায়ের শব্দে তাকিয়ে দেখলাম একটা আবছায়া... আমি উঠে দাড়ালাম.. হেটে দরজায় গেলাম... এত মানুষ ছিল এতক্ষণ এখন কেউ নেই, সেই একা আমি আর একা একা অপেক্ষা... কেউই নেই ব্যালকনিতে.. আমি খোজার চেষ্টা করলাম না... বসে রইলাম সেই তীব্র কড়া ঔষুধি গন্ধের মধ্যে... অনেক দূরে কয়েজন সিস্টার মনে হচ্ছিল কাউকে খুজছে... আমি ভাবলাম আমাকে, ধীরে ধীরে হেটে গেলাম.. ওরা বললো আপনার একটা সিগ্নেচার লাগবে, পেশেন্টের হাসবেন্ড থাকলে বেটার হত..আমি কিছু না বলে কলম টা নিয়ে একটা সাইন করে দিলাম, রিলেশনশীপের যায়গা তে লিখলাম "ওয়াইফ"..তারা বোধকরি সামান্য অবাক হল...সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে কয়েক পলক চেয়ে রইলো...হয়তবা তারাও এতটা নির্লিপ্ত স্বামী বা স্ত্রী দেখে নি...কি যেন বলতে গিয়েও না বলে দ্রুত পায়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল...ওরা অন্ধকারে মিলিয়ে যাবার পরপরই আমার হঠাৎই মনে হল...সিগ্নেচার কেন নিল..বা মায়ামির কি অবস্তা..সেটা তো জিজ্ঞাসা করা হয় নি... কয়টা বাজে এখন? পৃথিবীর বুকে কি নেমে এসেছে আলো.. বহুক্ষণ আগে চারবার ঘন্টার আওয়াজে ফিরে এসেছিলাম..চুপচুপ অন্য কিছু ভাবতে চেষ্টা করছি.. মায়ামি প্রচন্ড ব্যাথায় জেগে গেল পাশে আমি থাকবো না সে জানতো তার প্রেগ্ন্যাসির শেষ দিনগুলাতে আমি তার খুব কাছেই থাকতাম কিন্তু একই বিছানাতে না... তারপর সে উঠে গেল, হেটে এল ব্যাকলনিতে আমাকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না.. একবার ডক্টর কে ফোন করলো.. কি সব গোছালো এ্যাম্বুলেন্স এর আপডেট নিলো তারপর ব্যালকনিতে আমাকে ডেকে নিল.. আমি দেখতে পাচ্ছিলাম গোটা দৃশ্যটাই.. তবুও মায়ামির কোন খবর তখনো পাচ্ছি না.. এরা এতটা নির্দয় কেন! আমাকে কোন খবর না দিয়ে মায়ামি আর তার বাচ্চার সাথে কি হচ্ছে আমি জানি না.. আমি উঠে দাঁড়ায়, হেটে হেটে সেই চার্চ টা পেরিয়ে অল্প একটু দূরে এগিয়ে গেলাম.. শেষ রাতের আলোয় দুজন মানুষ কে দেখলাম... একজন কাদছে অন্যজন সান্তনা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে... আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের কি হয়েছে জানতে.. আমার কেন জানি না, মনে হচ্ছিল সেই ক্রন্দনরত মানুষটা আমি পাশের জন অন্য কেউ... মায়ামি কিংবা তার বাচ্চা কিংবা আমাদের সন্তান যে কোন একজনকে বাচানো যায় নি... আমি আর ওদের দিকে তাকালাম না... লম্বা পায়ে হেটে গেলাম অন্য প্রান্তে.. একজন নান আলো হাতে হেটে আসছিল.. আলো হাতে কালো পোশাকে তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছিল.. আমার দিকে না তাকিয়ে চলে গেল... আমি হেটে যেতে লাগলাম... কাছেই বোধ হয় কোথাও পাব আছে... মৃদু সুরে গান নাচ আর গলার শব্দ শুনতে পাচ্ছি.. একবার ভেতরে যেতে ইচ্ছে হল পাব জায়গাটা আমার পছন্দের কিন্তু কখনো যাই না... কয়েকটা সল্প বাসনার কন্যা হেটে চলে গেল... এখনো বাড়ি ফেরে নি ওরা.. কত রাত জাগে ওরা! আমি আর ভেতরে ঢুকলাম না.. একজন মাতাল এসে কি যেন অভিযোগ দিতে চাইছিল আমার কাছে.. আমি চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ওর কথা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে.. কিন্তু পারলাম না... আমার চোখে তখন মায়ামির চোখ ভেসে এল...ওর যন্ত্রণা তে ভেংগে যাওয়া চোখ... ওর বরফ শীতল হাত... মাতাল মানুষ টা বোধহয় বুঝে গেছে আমি তার দিকে নেই.. সে বললো ইউ ওকে ম্যান? ইউ আর ক্রায়িং... আমি জাস্ট বললাম নাথিং! বয়েস ডোন্ট ক্রাই... তারপর তাকে ফেলে হাটতে লাগলাম.... আমি ফিরে যেতে চাইছিলাম সেই ব্যালকনিতে কিন্তু আমি কিছুতেই কোন দিক দিয়ে কোন পথে এসেছিলাম.. মনে করতে পারলাম না.. কাউকে জিজ্ঞাসা করে যাব তাও জানিনা কি করে বোঝাবো! কোন নামই আমি জানি না.. আমি একবার শুধু শুনে নিলাম রিসিপশন টা কোন দিকে... আমি যে বুঝে গেছি তাও না... ধারনা করে হাটতে থাকলাম পাবটার একদমই সামনে চলে এলাম.. একটা মেয়ে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল.. আমি কিছুই বলার আগে সে দেখিয়ে দিল আর বলে দিল কিভাবে হসপিটালে যেতে হবে আর কিভাবে রিসিপশন পাব...আমি বলতে চাইলাম প্লিজ হেল্প মি..টেক মি দেয়ার...সে বুঝে নিল....জানি না সে এত কিছু কিভাবে বুঝে নিল... আমাকে নিয়ে গেল পথ ধরে.. যেতে যেতে বললো ইউ লাভ হার হা? আমি কিছু বললাম না.. সে বললো আই ওয়ার্ক দেয়ার..আই ওয়াজ অন অফ ইয়োর গার্লফ্রেন্ডস নার্স বাট মাই ওয়ার্কিং আওয়ার ইজ ওভার.. স্ট্রীপার ইজ মাই সেকেন্ড জব.. আমি বললাম ইউ আর আ সিস্টার এন্ড আ স্ট্রিপার... ইজেন্ট ইট আ কনফ্লিক্ট?? ও বললো ইয়োর গার্লফ্রেন্ড ইজ প্রিটি.. আমি শুধু বললাম থ্যাংকস... প্লিজ টেক মি দেয়ার.. দুই মিনিটে আমাকে পৌছে দিয়ে গেল... ধন্যবাদ দিতে পারলাম না চলে গেল..
আমি হেটে যেতে লাগলাম বিভ্রান্ত, ক্লান্ত পথ হারা জাহাজীর মত.. ব্যালকনিটাকে আমার সমুদ্র বলে ভ্রম হচ্ছিল.. আর দূরে দাঁড়ানো মানুষ গুলাকে আইল্যান্ড...বহু কষ্টে সাঁতরে ...সাঁতরে... আইল্যান্ডে পৌছে গেলাম...সেই ডক্টর, সেই সিস্টার গুলা... সেই আধো আলো ছায়া...ঢং ঢং করে ৫ বার গেল ঘন্টা বেজে... বুঝলাম ৫ টা বাজে...প্রচন্ড ঠান্ডায় মনে হচ্ছিল জমে যাচ্ছি...ডক্টর বললো...প্লিজ কাম উইথ মি...আমি গেলাম... ওনার মুখ দেখে সিচুয়েশন বোঝার চেষ্টা করলাম... বাট বুঝলাম না...সে বললো... কংগ্রেটস ম্যান ইউ আর নাউ আ প্রাউড ফাদার অফ আ বিউটিফুল বেবি গার্ল... বাট বিফোর ইউ গো দেয়ার ইউ হ্যাভ টু টেল মি সামথিং... আমি উত্তর দিলাম না... ইয়োর রিলেশনশিপ উইথ ইয়োর ওয়াইফ? আমি বললাম থ্যাংকস ডক.. ইউ আর ট্রু লাইফ সেভার.. আমি হেটে হেটে মায়ামির কেবিনে গেলাম...মায়ামির অল্প দূরে একটা বাচ্চা শুয়ে আছে কি চমৎকার নিশপাপ দেখাচ্ছে ওর মুখ গুলা.. মায়ামি আমাকে দেখলো, তাকালো হাসি দিতে চেষ্টা করলো.. আমি শুধু বললাম তোমার মেয়েটা অনেক সুন্দর হয়েছে.. ও কিছু বললো না.. তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে.. একবার শুধু বললো বাচ্চা তোমারও! আমি বললাম আমি জানি! মায়ামি... আলো নেমে আসতে এখানে অনেকটা বাকি এখনো.. কেবিনের জানালা দিয়ে কিসের যেন একটা সবুজ আলো ভেসে আসছিল.. সবুজ আলোটা এসে পড়ছিল মায়ামির ঠিক চোখের উপর.. ওর কালো চোখে, লম্বা চুলের, যন্ত্রনা থেকে ফিরে আসা মুখটাতে সবুজ আলোটা অদ্ভুৎ সুন্দর দেখাচ্ছিল.. মায়ামি বললো বাচ্চাটা কার মত হয়েছে? তোমার না আমার.. আমি হেসে ফেললাম! চেয়ারটা টেনে ওর পাশে বসতে বসতে বললাম মায়ামি আমার কাছে পৃথিবীর সব ছোট বাচ্চাদের একই লাগে.. কোনটা ছেলে বা মেয়ে সেটা অন্য কেউ এসে না বলে দিলে আমি বুঝি না.. মায়ামি হেসে দিল.. টেবিলের পাশে অনেক গুলা যন্ত্রে তখন আলো জ্বলছে আর নিভে যাচ্ছে.. মায়ামি বসে আছে..কয়েকজন সিস্টার এসে মায়ামির কিছু চেক আপ করে নিল.. আমাকে বললো.. মিস্টার ইয়োর টাইমস আপ.. ইউ মে লিভ দেম.. জাস্ট আ সেক সিস... মায়ামি বললো তুমি বাসায় যাও.. আমি বলতে চাইলাম মায়ামি আমি আরো দীর্ঘক্ষণ এখানে থাকতে চাই.. পারলাম না.. মায়ামির হাতটা ধরে বললাম.. থ্যাংকস! ফর গিভিং মি দ্যাট ফাদার'স ফিলিং... বাইরে এখনো সেরকম আধো আলো ছায়া...খুব কাছেই নেই কেউ।। অন্ধকার ভেদ করে এসে একজন সিস্টার জিজ্ঞাসা করলো আমি কোন নাম ঠিক করেছি কিনা? না করলে তার কাছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে ১০ ডলার দিলে সে একটা সুন্দর নাম আমাকে দিতে পারে..! আমি কিছু বললাম না... পকেট থেকে ১০০ ডলার তাকে দিয়ে বললাম...থ্যাংকস সিস্টার আই ডু হ্যাভ আ নেম ফর মাই বেবী গার্ল...তারপর হেটে যাচ্ছিলাম...আর আস্তে আস্তে বললাম ইটস হার্লিন কুইনজেল বেইলি ম্যারি ফ্রান্সিস লুইজিয়ানা বাই দ্যা ওয়ে...